আওয়ামী লীগ সবসময় ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। আমরা সবসময় ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছি। কখনো পেছনের দরজা দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি।
শনিবার বিকালে গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। দীর্ঘ ছয় মাস পর কার্যনির্বাহী সংসদের এই বৈঠক হয়। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত সময় বিকাল সাড়ে পাঁচটায় শুরু হওয়া বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে প্রহসন ও ভোট কারচুপির কালচার শুরু করেছে জিয়াউর রহমান। ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ কখনো পিছিয়ে ছিল না। সবসময় আওয়ামী লীগের ভোটের পারসেন্টেজ বেশি ছিল। ষড়যন্ত্র করে ভোটে আওয়ামী লীগকে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। সব ষড়যন্ত্রকে পেছনে ফেলে আজ আমরা এগিয়েছি।’
বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের চেষ্টার প্রসঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে চায়। আমাদের অপরাধটা কি? কোথায় ব্যর্থ হয়েছি? জিয়া-এরশাদ-খালেদা-তারেক সবাই মানুষ হত্যা করেছে। জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে।
তিনি বলেন, জিয়া-এরশাদ-খালেদা এদের সময় ক্ষমতা ছিল ক্যান্টনমেন্টে, পাকিস্তানি স্টাইলে মিলিটারি ডিক্টেটরশিপ চালু করেছিল। পরাধীনদের অনুসরণ করব না। নিজস্বভাবে দেশের উন্নয়ন করব, মাথা উঁচু করে চলব।
বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দুই জনই (খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান) সাজাপ্রাপ্ত। এদের সঙ্গে ডান-বাম অতিবাম এসে যুক্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। আওয়ামী লীগ ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। কখনও পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি।
তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত সম্মেলন করি। সময় ঘনিয়ে এসেছে। এর আগে কিছু কাজ আমরা করি। ঘোষণাপত্রের অনেক কিছু বাস্তবায়ন করেছি।
সরকার প্রধান বলেন, জনগণকে ধন্যবাদ, বার বার ভোট দিয়েছে। টানা তিন বার ক্ষমতায় রেখেছে। অনেক উন্নয়ন হয়েছে। জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক। অনেকে অতি জ্ঞানী হলেও তারা কম বোঝে। তাকিয়ে থাকে কখন তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে। বসে থাকে কখন সিগনাল আসবে। বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে। বিদেশ থেকে যেন ক্ষমতায় বসাবে। এখনকার বাংলাদেশ সেটা নয়।
এ সময় সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে দলীয় নেতাদের আরও বেশি কাজ করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের কোনো মানুষ যেন ভূমিহীন না থাকে আওয়ামী লীগ সরকার সেভাবেই কাজ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ঈদের আগে ৩৩ হাজার ঘর দিয়েছি। জুলাই মাসে আরও ৩৪ হাজার দেব। বাকি থাকবে ৪৫ হাজার। তাও দিয়ে দিলে দেশে ভূমিহীন কেউ থাকবে না। সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
ঈদে নির্বিঘ্ন মানুষ বাড়ি গেছে ও ফিরছে বলে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার প্রধান বলেন, গ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হচ্ছে। তৃণমূল থেকে উন্নয়ন করছি। মানুষ গ্রামের বাড়ে গিয়ে ঈদ করেছে। উৎসব করেছে। এতে গ্রামে অর্থ সরবরাহ বাড়ে। বিশ্বে অনেক দেশে এটা কমে গেছে।
বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রকৃতপক্ষে সেভাবে আমাদের এখানে দাম বাড়েনি। আর জিনিসপত্রের দাম সারাবিশ্বের বেড়েছে। বিভিন্ন দেশের হিসাব নিলে দেখা যাবে কোথাও ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি।
ইউরোপের কোন কোন দেশে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি রয়েছে। ভোজ্য তেল পাওয়া যাচ্ছে না। লন্ডনে রেশনিং করে দেওয়া হয়েছে। এক লিটারের বেশি কেউ তেল কিনতে পারবে না। প্রত্যেকটা জিনিস সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নিতে হবে। এর বেশি নিতে পারবে না। সারা বিশ্বে এই অবস্থা।’
তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পরে আমাদের শিপিংয়ের ভাড়া এত বেড়ে গেছে যে যেসব দেশ থেকে আমরা পণ্য আমদানি করি। সেই আমদানির ওপর প্রভাব পড়ছে। ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধের পরে তার প্রভাব ইউরোপ-আমেরিকার উপর পড়েছে। উদ্যোগ নিলে ভোজ্যতেল দেশে উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং এদিকে তিনি দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান। ধানের তুষ দিয়ে তেল উৎপাদন হচ্ছে বলেও তিনি এ সময় উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী যে মন্দা দেখা দিচ্ছে, তা ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে। তার প্রভাব আমাদের উপরে আসতে পারে। কাজেই আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।’
সূত্র : ঢাকাটাইমস